আজ সেই ২৮ তারিখ, টার্গেট কে ?

হামলাকারীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে জোর অভিযান চলছে: জীবননগর থানার ওসি এস.এম জাবীদ হাসান

এক মাসের ব্যবধানে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেনি পুলিশ। একমাসের ব্যবধানে দুটি ঘটনায় এখনো জেলাজুড়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে ভয়-আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষ করে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মধ্যে এই হামলার আতঙ্ক বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যা সরেজমিনে উঠে এসেছে। হাট-ঘাট, স্বর্ণ চোরাচালান নাকি রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কারণে একেরপর এক হামলার ঘটনা তা পরিস্কার হওয়া যায়নি।

আরো পড়ুন=>> চুয়াডাঙ্গায় আপত্তিকর অবস্থায় ইলিয়াস আটক

যদিও হামলার শিকার দুজন চেয়ারম্যানই জীবননগর থানায় আলাদা আলাদা দুটি অভিযোগ দিয়েছেন তারপর পুলিশ আজও পর্যন্ত এর কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি। এছাড়া এ ঘটনায় গত ৩০ জুন হামলার প্রতিবাদে আসামিদের গ্রেফতারের দাবীতে স্থানীয়ভাবে সংবাদ সম্মেলন করে ৪৮ ঘন্টা আল্টিমেটাম দেওয়া হলেও এখনো পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার নেই।

অনেকে আবার বলছেন কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে আসার ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে পুলিশ বলছে- দ্রুতই তারা অপরাধী আটকসহ প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে।

এখন প্রশ্ন সেটা কবে? আজ আবার সেই ২৮ তারিখ, তাহলে আজও কি দূর্বৃত্তরা কোনো টার্গেট হামলা করবে? এ প্রশ্ন জীবননগরবাসীর। তবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হাফিজুর রহমান, রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহাজ্জত মির্জা, সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিল্টন মোল্লা, কেডিকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুল বাসার শিবলু, শিবলুর ভাই যুবলীগ নেতা জুয়েল রানা, সাবেক পৌর-মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, শিংনগর গ্রামের হায়দার আলী এবং সাংবাদিক সালাউদ্দিন কাজল এ ঘটনার পর থেকে খুব সর্তকভাবে চলাচল করছেন বলেও সরেজমিনে উঠে এসেছে। তাদের এই সর্তক চলাচলে সবাই ধারণা করছেন। তাহলে কী পরবর্তী টার্গেট তাদের কেউ?

জীবননগর অঞ্চলের বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তির সাথে কথা হলে, তারা নাম না প্রকাশ করে বলেন, গত ২৮ মে জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে হামলা এবং গত ২৮ জুন একই স্টাইলে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান সুরুদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনা আমাদের চিন্তিত করেছে।

প্রথম ঘটনাটি দুই মাস ও দ্বিতীয় ঘটনাটি এক মাস পেরুলেও আশ্চর্যের বিষয় এই দুটি ঘটনায় এখনো পর্যন্ত পুলিশ কোনো কূল-কিনারা পায়নি। এরমধ্যে আবার ২৮ জুলাই চলে আসলো।

স্থানীয় এক সাংবাদিক বলেন, এভাবে যদি একের পর এক হামলার ঘটনা চলে, তাহলে তো সেটা ভয় ও আতঙ্কের।
জেলার বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে কথা হলে আজকের খাসখবরকে তারা জানান- একজন ইউপি চেয়ারম্যান যদি ইচ্ছামতো ঘুরতে ভয় পায়। তাহলে জনগণের সেবা কিভাবে দেবে।

দুজন চেয়ারম্যানের ওপর হামলাকারী এখনো গ্রেপ্তার না হওয়ায় ভয়-আতঙ্ক আমাদের পেয়ে বসছে। আমরা পুলিশের মুখের দিকে চেয়ে আছি। তারা দ্রুত এসমস্ত ঘটনার রহস্য উদঘাটন করুক।

এদিকে, হামলার শিকার দুই চেয়ারম্যান চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজী আলী আজগর টগরের বিশস্ত লোক বলেও জানা গেছে। স্থানীয় এমপির বিশস্ত লোক হবার পরেও কেন তারা মার খেলেন। তাছাড়া এখনো কেন আসামি আটক নেই, বিষয়টি ভাব্বার?

তবে আসামিরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কেন টার্গেট করে হামলা করছেন তা জানা অসম্ভব। ফিল্ম স্টাইলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দুই চেয়ারম্যানের হামলা ধরন একই রকম। কিন্ত মামলা হলেও পুলিশ কেন আসামিদেরকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে পারিনি এমন প্রশ্ন তুলেছেন জনপ্রতিনিধিরা। এমন ঘটনায় আসামি আটক না হওয়ায় আতংক বিরাজ করছে জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে।

জানা যায়, মোটরসাইকেলযোগে হেলমেট বাহিনীর হামলার ভয়ে অনেক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গা’ঢাকা দিয়েছেন। অনেকে বাইরে বের হলেও সাথে কর্মী-সমর্থক নিয়ে বের হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। এছাড়া অনেক জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাবধানে থাকার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে সতর্ক করা হয়েছে।

এবিষয়ে হামলার শিকার উথলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার একমাত্র ছেলে রাব্বী নেওয়াজের সাথে এর আগে বেশ কয়েকদিন আগে আজকের খাসখবরের কথা হয়েছিলো।

সেসময় রাব্বী নেওয়াজ বলেছিলেন- আব্বার ওপর হামলার ঘটনায় থানায় আমি বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দিয়েছিলাম। তবে আশ্চর্যের বিষয়, আজও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি। আমি মাঝেমধ্যে পুলিশের কাছে খোঁজখবর নিলে তারা বলে খুব দ্রুতই অপরাধীরা গ্রেপ্তার হবে।

এই হামলা ঘটনায় কোনো রাজনৈতিক কিংবা ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব আছে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে রাব্বী নেওয়াজ বলেন- আমার আব্বা খুব ফ্রেস মানুষ, এমন কোনো দ্বন্দ্বের কথা আমার জানা নেই।

এদিকে, এবিষয়ে মনোহরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান সুরুদ্দিনের সাথেও বেশ কয়েকদিন আগ্র কথা হলে, তিনি বলেছিলেন- আমার ওপর হামলার ঘটনায় আমার বড় ভাই বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক বা হামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।

তিনি আরও বলেন- আমরা জনপ্রতিনিধি। আমাদের কাছে মানুষ আসে সেবা নিতে। তাই আমাদের কোনো টাইম ফ্রেম নেই। ভোর, রাত সকাল-বিকেল সবসময় মানুষ আসবে। কিন্তু আমার ওপর হামলার ঘটনায় সব চেয়ারম্যানরাই ভয়ে আছে। তবে পুলিশের ওপর আমার বিশ্বাস আছে, তারা দ্রুত এঘটনার রহস্য উদঘাটন করবে।

সুরুদ্দিন চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমার তো কোন শত্রু নেই। আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না কেউ আমার ওপর হামলা করবে।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের অন্তর্গত জীবননগর ও দামুড়হুদা উপজেলার অধিনস্থ ইউনিয়নগুলোর চেয়ারম্যানদের মধ্যে একটু বেশিই আতঙ্ক কাজ করছে। সরেজমিনে যা উঠে এসেছে। যদি কেউ মুখ ফুটে কিছু বলছে না। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরাই একটু সতর্কভাবে চলাচল করছেন।

আরও আশ্চর্যের বিষয় এ প্রতিবেদন প্রস্তুত করার সময় কয়েকজন চেয়ারম্যানের সাথে কথা হলে তারা কোনো মন্তব্যই করতে চাননি। আবার অনেকে ফোনও রিসিভ করেননি। এছাড়া যারা কথা বলেছেন তারাও নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজী নন।

হামলার ঘটনার পর সরেজমিনে গেলে আরও জানা যায়- জীবননগরের একজন সাংবাদিকও তার চলা ফেরায় সতর্কতা অবলম্বন করছেন। অসমর্থিত সূত্র জানায়- পুলিশ ও সাংবাদিককে সাবধানে চলাচলের পরামর্শ দিয়েছেন।

এছাড়া জীবননগর এলাকার বেশ কিছু মানুষের সাথে আজকের খাসখবরের কথা হলে, তারা নাম প্রকাশ তো দুরের কথা, বক্তব্যই দিতে রাজী হননি। তবে এমন কয়েকজন ব্যক্তির সাথে আলাপকালে উঠে এসেছে- হাট-ঘাট ও স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের নানা কথা। অনেকেই ধারণা করছেন- এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের পর এ অঞ্চলের অপরাধী সিন্ডিকেট সতর্কতা অবলম্বন করছে।

এছাড়া বিভিন্ন ঘটনা ভিন্নখাতে নিতেও দুজন চেয়ারম্যানের ওপর হামলা হতে পারে। আবার বেশ কয়েকজন এটাকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে এ ঘটনা ঘটতে পারে বলেও মতামত দিয়েছেন।

তবে সম্প্রতি জীবননগর থানা এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সচেতনমহল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সচেতন মহলের কয়েকজন বলেন- জীবননগর উপজেলায় এদানিং মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম বেড়েছে। দুজন চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। থানা পুলিশও কিছুই করতে পারছে না। সবমিলিয়েই চিন্তার বিষয় বৈকি।

এবিষয়ে জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস.এম জাবীদ হাসান বলেন- দুজন ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আমরা জোর অভিযান চালাচ্ছি। প্রকৃত রহস্য দ্রুত উদঘাটনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন- দুজন চেয়ারম্যানের ওপর হামলার ঘটনার পর আমরা দুটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দুজন চেয়ারম্যানের স্বজন বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। আমাদের সিনিয়র স্যারেরাও এই কেস নিয়ে দিনরাত কাজ করছেন। আশা দ্রুত আমরা সফলতা পাবো।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মে জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নানকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় দুর্বত্তরা। এখনো তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন। এর ঠিক এক মাসের মাথায় শুক্রবার (২৮ জুন) এই জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন খান সুরুদ্দিনকে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে তিনিও মারাত্মক জখম হয়ে প্রথমে যশোর পরে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তিনি রেফার্ড করা হয়। তবে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দুজন চেয়ারম্যানই সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *