চুয়াডাঙ্গায় সেতু আছে সংযোগ সড়ক নেই

এখনো ভরসা নৌকা আর সাঁকোতে

চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী পারাপারে এখনো দুটি স্থানের ভরসা বাঁশের সাঁকো ও নৌকা। একটি স্থানে সেতু থাকলেও নেই সংযোগ সড়ক। অপরস্থানে সেতু না থাকায় নৌকায় যেন একমাত্র ভরসা। ফলে নদী পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের।

পীরপুর- গঞ্জেরঘাট এলাকার সেতুর পাশেই রয়েছে বাঁশের তৈরি সাঁকো। সেখানে পারাপার করতে গুণতে হচ্ছে টাকা। আর হাতিকাটা-তালতলা এলাকায় এখনো ভরসা ছোট নৌকাতেই। এসব পারাপার যেমন সময়ের ব্যাপার তেমনই ঝুঁকিপূর্ণ।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার হাতিকাটা-তালতলা ঘাট ও শহরতলীর পীরপুর-গঞ্জেরঘাটে ওপর দিয়ে নদী পারাপার করতে গিয়ে এমন ভোগান্তির পড়তে হয় বেশ কয়েক গ্রামের লাখ লাখ মানুষের। দুর্ভোগের কথা স্বীকার করে সদর উপজেলা প্রশাসন বলছে, ভোগান্তি নিরসনে চিহ্নিত এ দুটি স্থানে সেতু নির্মাণ এবং সেতু চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

আরো পড়ুন=>> রাখাল শাহার মাজার কমিটি গঠন কে কেন্দ্র করে মারামারির

ওই দুটি স্থানে ঘুরে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা এলাকার হাতিকাটা ও তালতলা গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে মাথাভাঙ্গা নদী। এই নদীর দু’পাশে রয়েছে ১০-১৫ টি গ্রাম। তবে নদী পারাপারে নেই একটা সেতু। বছরের পর বছরের লাখো মানুষ শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো আর বর্ষায় নৌকায় নদী পারাপার হয়ে আসছেন।

একটা সেতুর অভাবে নিয়মিত দুর্ভোগে পড়ে গ্রামবাসীরা। পারাপার থেকে শুরু করে সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে পিছিয়ে পড়েছেন তারা। দুপাশের গ্রামের মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু একটা সেতু না থাকায় কৃষি পণ্য আদান প্রদানেও জটিলতায় পড়তে হয়। এ নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি তুলে এলাকাবাসীসহ আশপাশের গ্রামবাসীরা মানবন্ধনও করেছে। তাতেও কোন ফল আসেনি।

দুর্ভোগ যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। চুয়াডাঙ্গার এলজিইডি বিভাগ আশ্বাস দিয়ে গেছে সেতু হবে। এই আশ্বাসের বাণী নিয়ে অপেক্ষায় আছে মানুষ। এ নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণ হলে হাজারো গ্রামবাসীর যাতায়াত সুবিধা, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা কৃষি পণ্য আদান প্রদানসহ সব ধরনের সুবিধা সৃষ্টি হবে।

অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর প্রায় পৌঁনে সাত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি কোন কাজে আসছে না। এক বছর আগে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণকাজ শতভাগ শেষ হলেও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতার কারণে সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। এতে যানবাহন ও এলাকাবাসীর চলাচলে দুর্ভোগ ও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিয়মিত।

স্থানীয় কৃষক থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সবাই এখনও নৌকায় নদী পার হচ্ছেন। আর পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলো চুয়াডাঙ্গা শহরসংলগ্ন মাথাভাঙ্গা সেতু অথবা দামুড়হুদা উপজেলার কেশবপুর সেতু হয়ে অনেকটা পথ ঘুরে চলাচল করতে হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় মানুষের দাবির মুখে তারা পীরপুর-গঞ্জেরঘাট সড়কে মাথাভাঙ্গা নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ৯০ মিটার দীর্ঘ এবং ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত সেতুটি নির্মাণে বরাদ্দ হয় ৬ কোটি ৬৬ লাখ ৬৮ হাজার ১০ টাকা। চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি গঞ্জেরঘাট প্রান্তে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

দরপত্রের চুক্তি অনুযায়ী সেতুটি ২০২২ সালের ১৮ আগস্টের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা ছিল। তবে এক বছর পরও সেতুটি চালু করা যায়নি। ফলে আটকে আছে সংযোগ সড়কে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা হাতিকাটা গ্রামের বাসিন্দা সুমন হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তালতলা ঘাটে একটির সেতুর অভাব অনুভব করে আসছি।

এই ঘাটের ওপর দিয়ে নৌকায় শত শত মানুষ পারাপার হয়। এতে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। এই নদীতে সেতু নির্মাণ করার জন্য মানবন্ধন করা হয়েছে। এতেও কোনো কাজ হয়নি। সবাই বলেছে সেতু হবে। কিন্তু এখনো সেতু নির্মাণ হয়নি।

এদিকে পীরপুর গ্রামের সাইদুল ইসলাম বলেন, এই ঘাটে সেতু আছে। সেতুর সংযোগ সড়ক নেই। এই নদীতে সেতু থেকেও কোনো উপকার আসছে না। ফলে সেতুর পাশ দিয়ে নৌকা করে পারাপার করতে হচ্ছে। আমাদের কৃষি পন্য নিয়ে পড়তে হয় দুর্ভোগে।

আবার সব ধরনের যোগাযোগ যাতায়াত কিছু হয় না। তাই জোর দাবি করে বলছি সেতুর সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা হোক। তা না হলে এই ভাবে আর কতদিন পারাপার হবো। বছরে পর বছর এই ভাবে নদী পারাপার হচ্ছি। একে দুর্ভোগের সীমা আরো বাড়ছে।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, তালতলা ঘাটের ওপর প্রায় ৯০ মিটার একটা সেতু নির্মানের প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটা ডিপিপি অনুমোদন বাস্তবায়ন হলে এই সেতুর নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। পীরপুর স্থানের যে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে সংযোগ জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সড়ক হয়নি। খুব দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *