চুয়াডাঙ্গায় রেলওয়ে ওভারপাসের নকশায় ত্রুটি, বেড়েছে সংশোধন ব্যয়ও

নির্মানাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের কাজে ধীর গতি, শেষ হয়েছে মাত্র ৪০ শতাংশের কাজ

চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের রেল বাজার থেকে পুরোনো ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ড এলাকা পর্যন্ত নির্মাণাধীন রেলওয়ে ওভারপাসের নকশায় ত্রুটি ধরা পড়েছে। আর এই ত্রুটি সংশোধনে ব্যয় বেড়েছে আরও প্রায় ১১ কোটি টাকা।

সংশোধিত নতুন নকশায় ওভারপাসের র‌্যাম্পের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সাথে সময় বেড়েছে আরও এক বছর। তবে প্রায় বছর খানেক ধরে চলা ওভারপাসের এই নির্মান কাজ এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। যারফলে বোঝা যাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন হবে রেলওয়ে ওভারপাসটি। কাজে ধীর গতি থাকলেও একের পর এক বসছে স্প্যান। এতে বাড়ছে শহরের সৌন্দর্য।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলায় ভোগান্তিতে পড়েছে পথচারীসহ সাধারণ মানুষ ও শহরবাসী। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের আগেই বাকি কাজ শেষ হবে বলে আশা তাদের।

জানা গেছে, যানজট কমানো ও নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপনসহ নানা সমস্যার সমাধানে চুয়াডাঙ্গা শহরের রেলবাজার এলাকায় রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের ১২ আগস্ট। এর আগে ২০২২ সালের ২৮ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ দরপত্র আহ্বান করে।

আরো পড়ুন=>> কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদানকালে সাহিদুজ্জামান টরিক

ঢাকা বনানীর ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এনডিই) নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ৭৪৮ দশমিক ৬৯৬ মিটার আয়তনের এ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৫ কোটি ১১ লাখ ৭ হাজার টাকা। প্রথম কার্যাদাশে সময় ছিল চলতি বছরের গেল জুন মাস পর্যন্ত। তবে এর মধ্যেই আবার সংশোধন ব্যয় ও সময়কাল বাড়ানো হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্মাণ কাজ চলাকালেই বিপত্তি দেখা দেয় ওভারপাসের নকশার র‌্যাম্পের আয়তন নিয়ে। দুইপ্রান্তের র‌্যাম্পের নকশায় প্রথমে আয়তন ধরা হয়েছিল ৩৩০ মিটার। এতে ওভারপাসে উঠতে সংযোগ পথ অনেকটা খাড়াখাড়ি হচ্ছিল। এজন্য সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) পাঠানো হয়।

সংশোধিত নকশায় ওভারপাসে উঠতে সংযোগ সড়ক অর্থাৎ র‌্যাম্পের আয়তন বাড়ানো হয়েছে। দুইপ্রান্তে র‌্যাম্পের আয়তন বেড়েছে আরও ১১২ মিটার। এতে নতুন করে আরও ব্যয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। এ অবকাঠামো নির্মাণে এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৮৬ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার টাকায়। সেইসাথে সময়ও বেড়েছে আগামী ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত। যদিও কাজ শুরুর পর প্রথম দিকে বেশ দ্রুত গতিতেই চলছিল নির্মাণ কাজ। এখন তা ধীর গতিতে এগোচ্ছে বলে জানা গেছে।

এদিকে, সংশোধন ব্যয় ও সময়ের সাথে বাড়ছে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি। তাদের অভিযোগ, ধীরগতির কাজে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন তারা। দ্রুতই উন্নয়নের ভোগান্তি লাঘবের দাবি সাধারণ মানুষের।
জিল্লুর রহমান রুবেল নামে এক যুবক বলেন, প্রথমদিকে ওভারপাসের কাজ খুব দ্রুত গতিতেই চলছিল। কিন্তু মাঝপথে এসে কাজ স্লো হয়ে গেছে। এজন্য এ পথ দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। রাস্তা খুড়ে রাখায় যখন তখন ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।

ইয়াসিন হোসেন নামের এক ইজিবাইক চালক বলেন, এই রাস্তায় সহজে চলাচল করা যাচ্ছে না। আবার যদি কাজ শেষ হতে আরও ১ বছর লেগে যায় তাহলে যাতায়াত করতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হবে। দ্রুত কাজ শেষ হলে চলাচলে গতি ফিরবে।

সাকিব নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, এ রাস্তায় একেবারেই আসার উপায় নেই। দুর্ঘটনার শংকা থাকে। এছাড়া ধুলো-বালি তো উড়েই।

তবে এতো ভোগান্তির পরেও রেলওয়ে ওভারপাসের জন্য দিন গুনছে জেলাবাসী। ভোগান্তি পেরিয়ে স্বস্তির অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।

চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর উজ্জ্বল হোসেন জানান, এখন চলাচল করতে কিছুটা কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। কিন্তু ওভারপাসের কাজ শেষ হলে সে সমস্যা আর থাকবে না। তখন মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারবে। তখন মানুষের কর্মঘণ্টাও বাঁচবে।

এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং প্রকল্প পরিচালক খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, ওভারপাসের কাজ ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বাকি কাজের জন্য সময় রয়েছে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত। আমাদের আশা, এরই আগেই অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারির মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে।