আলমডাঙ্গা মুঘল আমলের তৈরী শাহী জামে মসজিদ

মোঘল আমলের শৈলীতে নির্মিত স্থাপত্য শাহী জামে মসজিদ। মধ্যযুগে ভারতবর্ষে মুসলমানদের আগমনের মাধ্যমেই সাধারণত এ দেশে ইসলামের প্রচার প্রসারে জন্য তৈরি করা হয় মসজিদটি। এমনই সময়ে এ বঙ্গ প্রদেশে মুসলিমদের আবাসস্থল গড়ে ওঠে। এই মসজিদটি আনুমানিক ৭৭০ বছরের আগে পুরাতন মসজিদ এটি আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি বাদেমাজু গ্রামের অবস্থিত ৩২ শতক জমির উপর নির্মিত, এই শাহী জামে মসজিদ।

কালের সাক্ষী হয়ে এখনো যুগ যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ১১ টি ছোট বড় গম্বুজ ও তিনটি দরোজা, দুইটা জানালা, তৈরি করা প্রাচীনকালের এই মসজিদটি। শাহী মসজিদ প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নজির। চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়নে বাদেমাজু গ্রামের মসজিদটির অবস্থান হওয়ায় এটাকে বাদেমাজু শাহী জামে মসজিদ নামে ডাকা হয়।

জনশ্রুতিতে আছে ইরাকের শাহ সুফি আদারি মিয়া ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এ অঞ্চলে আস্তানা তৈরি করেন ও তার ওয়ারিশগণ এ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়। এই মসজিদটি আলমডাঙ্গা শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

আরো পড়ুন=>> সূরা ফাতিহা পাঠের ফজিলত ও গুরুত্ব

স্থানীয়দের ধারণা হজরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে গ্রামে মসজিদটি নির্মাণ করেন। ইতিহাসবিদদের মতে, ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির নদীয়া বিজয়ের অনেক আগে বাদেমাজু মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে আজো দাঁড়িয়ে আছে এ মসজিদ। ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, প্রথম শতাব্দীর কোনো এক সময় হজরত খাইরুল বাসার ওমজ (রহ.) নদীপথে আলমডাঙ্গায় আসেন।

ইসলাম প্রচারের জন্য গ্রামে আস্তানা গড়েন তিনি। এখান থেকেই তিনি ইসলাম প্রচার-প্রসারের কাজ শুরু করেন। এ সময় তিনি এ গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। ৭৭০ বছরের ঐতিহাসিক পুরাতন মসজিদটির নির্মাণশৈলী অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এই মসজিদের চার কোণের থামের ওপর রয়েছে ৪টি ছোট মিনার এবং মাঝে দুইটি মিনার, এছাড়াও আছে তিনটি বড় বড় গম্বুজ।

মসজিদটির নামাজের জন্য ৩ কাতারের আছে জায়গা। মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে তিনটি দরজা আর দুইটি জানালা। মসজিদটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা ইট, টালি ও চুন-সুড়কি। এ ছাড়া রয়েছে ৬টি পিলার । মসজিদের ভেতরের দেয়ালে ছিল নানা ধরনের লতাপাতা ও ফুলের কারুকাজ।

অবাক হলেও সত্য যে মসজিদের গাঁথুনির ছিল চুন-সুড়কির দিয়ে কাজ। মসজিদের শিলালিপিটি প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। তারপরও স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী দেখে অনুমান করা যায়, অনেক পুরাতন। ১৯৯৬ সালের দিকে মসজিদটির সংস্কারের পর পরবর্তীতে আরো ৭ কাতার মুসল্লিদের জন্য বাড়ানো হয়।

মসজিদের ভেতরে বর্তমানে ৩ কাতার ও বাইরে ৭ কাতার করে মুসল্লিরা নামায আদায় করতে পারেন। ইতিহাস থেকে জানা যায় এটা প্রতিষ্ঠিত হয় মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলে, কিন্তু ওই সময় কে এই মসজিদ নির্মাণ করেছিল সে বিষয়ের কোনো উল্লেখ নেই। স্থানীয়রাও এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না।

ইতিহাসবিদদের মতে, মসজিদের নির্মাণকাল বিষয়ে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মত হচ্ছে, মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে এ মসজিদ নির্মিত হয়েছিল। কারণ মুঘল আমলে নির্মিত অন্যান্য স্থাপনার সঙ্গে এ মসজিদের নির্মাণশৈলীতে অনেক সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুসরণ করে বাদেমাজু শাহী মসজিদ নির্মিত।

মুঘল আমলের বেশিরভাগ স্থাপনার মতো এ মসজিদেও লাল জাফরি ইট ব্যবহার হয়েছে। মসজিদটির সংস্কারের ওভাবে বাইরের অংশগুলো আস্তে আস্তে খসে যাচ্ছে।

অতি শিগগির সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেছে স্থানীয়রা তবে বর্তমানে এটি চুয়াডাঙ্গা জেলার বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়টি। প্রতিদিন এখানে শতশত দর্শনার্থী ভিড় করে থাকেন।

মসজিদের পাশেই অবস্থিত ৯ নং ডাউকি ইউনিয়ন পরিষদ ও মসজিদের সামনে অবস্থিত বাদেমাজু বাদল স্মৃতি একাডেমী এছাড়াও মসজিদকে কেন্দ্র করে আছে ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও বাদেমাজু টবাজার ।

স্থানীয়দের দাবি অতি দ্রুত মসজিদ টি সংস্কার করে প্রাচীনকালের ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে দরকার।