বৃষ্টির অজুহাতে চুয়াডাঙ্গায় কাঁচাবাজারে আগুন

কাঁচা বাজারে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে অস্থিরতা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আকাশছোয়া। কখনও দাম সামান্য কমলেও কয়েক দিনের মধ্যেই আবারও বেড়ে যায়। উচ্চমূল্যের বাজারে নাকাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। প্রতিনিয়তই বাজারে এসে হিমশিম খেতে হয় তাদের।

ক্রেতাদের অভিযোগ, উচ্চমূল্যের কারণে অনেকেই চাহিদা মতো প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না। আর চড়া দামের জন্য বিক্রেতারা দুষছেন বৃষ্টিকে। তারা বলছেন, চাহিদা মতো কাঁচা শাকসবজি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাড়তি দামে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রবিবার (৭ জুলাই) সকালে চুয়াডাঙ্গার কাঁচাবাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী রুহুল কুদ্দুস । তিনি আজকের খাসখবরকে বলেন, কয়েক দিন আগেও লালশাক কিনেছি ১০ টাকা আঁটি। সেটা এখন কিনতে হচ্ছে ১৫ টাকা করে। দুই আঁটি কিনেছি ৩০ টাকায়। আমি তো কিনতে পারছি, কিন্তু যাদের উপার্জন কম তারা শাক ভাতও খেতে পারবে না। শাক ভাতেও এখন স্বস্তি নেই।

একই শাকের দোকানের সামনেই কথা হয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি হাসান আলীর সঙ্গে। স্বল্প বেতনে চাকরি করেন এই কর্মজীবী।

তিনি বলেন,‘শাক ভাত খাবো তারও উপায় নাই, দাম অত্যধিক বেড়েছে। আমার মতো যারা কম আয়ের মানুষ, তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। যাদের টাকা আছে, তারা ভালোই আছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, আমরা ভালো নেই। আমি লাউ কিনতে চেয়েছিলাম, দুটি লাউয়ের দাম চাইলো ১০০ টাকা। শেষ পর্যন্ত দোকানি ৯০ টাকায় নামলেও নিতে পারলাম না। কিন্তু এই দুইটি লাউয়ের দাম সর্বোচ্চ ৬০ টাকা হতে পারে, তবে ১০০ টাকা না।

কাঁচাবাজারে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, শাক-সবজিসহ আলু-পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যই বিক্রি হচ্ছে উচ্চ দামে। এতে বাজার করতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেলো অসন্তোষ।

তারা বলছেন, বাজারে সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সব ধরনের জিমিসের দাম । খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, বছরখানেক আগেও ৫ টাকা থেকে ১০ টাকার মধ্যে সব ধরনের শাকের আঁটি পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন তা পাওয়া অসম্ভব প্রায়। বাজারে প্রতি আঁটি লাউ শাক বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। এছাড়াও পুঁই শাক ২০ টাকা, ডাঁটা শাক ২০ টাকা, লাল শাক ২০ টাকা, সবুজ শাক ২০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা ও ডাঁটা ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শুধু শাক নয়, আজ বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। ভারতীয় টমেটো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, দেশি টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ১০০ টাকা, চায়না গাজর ১৭০ টাকা, লম্বা বেগুন ১২০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১২০ টাকা, শসা ১০০-১২০ টাকা, উচ্ছে ১২০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ৮০টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৬০ টাকা এবং ধনেপাতা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৫০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, ফুলকপি ৮০ টাকা এবং বাঁধাকপি ৪০ টাকা করে পিস বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি হালি কাঁচা কলা ৪০ টাকা এবং লেবুর হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা করে।সব ধরনের সবজিই বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।

বাজারে সব ধরনের পেঁয়াজের দাম ১০০ ছাড়িয়েছে। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। বড় সাইজের পেঁয়াজ ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। আর দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা করে।

এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব ধরনের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে। এছাড়া আজ লাল আলু ৬০ টাকা, সাদা আলু ৬০ টাকা, বগুড়ার আলু ৮০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা, চায়না আদা ৩০০ টাকা এবং ভারতীয় আদা ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৬০০ টাকা কেজি দরে।

এদিকে, বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ৮০০ থেকে ২২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৬০০ টাকা কেজি দরে, কাতল মাছ ৩৫০-৫০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২২০-৩০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০ টাকা, ছোট কাটরা মাছ ৪৮০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বেশিরভাগ বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ – ৮০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১১০০ টাকা কেজি দরে। বাজারে সব ধরনের মুরগির মাংসের দামই কমেছে। আজ ওজন অনুযায়ী ব্রয়লার মুরগি ২৬০ টাকা, কক মুরগি ৩৩০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৪৫০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

তাছাড়া মুদি পণ্যের দাম রয়েছে প্রায় অপরিবর্তিত। তবে কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। আজ প্যাকেট পোলাওর চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাওর চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১৪০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১৩০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১৩০ টাকা, ডাবলি ৮০ টাকা, ছোলা ১১৫ টাকা মাশকলাই ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৭ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া এলাচি ৪ হাজার ৫০০ টাকা, দারুচিনি ১৫০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা, সাদা গোল মরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা ও কালো গোল মরিচ ৯০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এবিষয়ে জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির জন্য আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। ব্যবসায়ীদের সতর্কতা জারী ও বিল ভাউচার সহ বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিচ্ছি। নির্ধারিত মূল্য থেকে যেন বেশি দামে বিক্রি না করে সেই জন্য আমরা ব্যবসায়ীদের সচেতন করা হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকার সব সময় পদক্ষেপ নিচ্ছে এবং আমরা সকল কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।