কৃষকের কাছ থেকে বাজারে গেলেই সবজির দাম দ্বিগুণ

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কুলপালা মাঠে কথা হয় সবজি চাষি আলী হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এ বছর বর্ষাকালীন সব ধরনের সবজির দাম অনেক বেশি। তবে আমরা চাষিরা সেই লাভের অংশ কখনো পাই না।

আমার খেত থেকে বেগুন তুলে পাইকারী বাজারে বিক্রি করলাম। প্রতি কেজি ৮০ টাকা করে। দুই হাত ঘুরে সেই বেগুন চুয়াডাঙ্গা কাচাবাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ শত থেকে ১২০ টাকা কেজি। আমি আবাদ করে দাম পেলাম ৮০ টাকা আর ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করে পেল ২০ টাকার বেশি। এ বছর দুই বার চারা রোপণ করতে হয়েছে বেগুনের । আবার সার ওষুধের দাম বৃদ্ধি, এ ছাড়া খেত থেকে বেগুন তুলে পরিষ্কার করতেও কর্মীদের ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। আমাদের লাভ নেই।’

এ বছর বৃষ্টির কারণে বর্ষাকালীন সবজির আবাদ প্রথমবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে দ্বিতীয়বার আবার নতুন করে চারা রোপণ করতে হয়। এ জন্য প্রত্যেক সবজির উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এ ছাড়া বীজ, সেচ, সার, কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে খরচ বেড়েছে।

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের কুলাপালা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে শুধু সবজির আবাদ বেগুন,কচু, পেপে,আমড়া,লাল শাক, সবুজ শাক, ডাটা শাক আবাদ হয়েছে মাঠজুড়ে। নারী-পুরুষ মিলে সবজি তুলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।

সবজি চাষি কেসমত ব্যাপারী বলেন, ‘সকলে কচু বিক্রি করেছি ৬০ টাকা কেজি। এখন কাকরোল তুলছি একটু পরে ব্যাবসায়ীরা আসবেন । মাঠ থেকেই ৫০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাবেন। আমার ৫০ টাকার কাকরোল চুয়াডাঙ্গা সদরে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। বাড়তি টাকা আমার কাছে আসে না। আবার আমার ৬০ টাকার কচু বাজারে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। আমি বাজারে খুচরা বিক্রি করব, সেই সময় আমার হাতে নেই। ফলে মাঝখানের দুই ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে বাড়তি দামে কিনতে হয় মানুষকে।’

ছবি: আজকের খাসখবর

অপর কৃষক সামাদ মিয়া বলেন, ‘আমার নিজের জমি নেই। লিজ নিয়ে আমি কৃষিকাজ করি। একটি বেগুনের চারার দাম পড়ে প্রায় ৮ টাকা। প্রথমবার বৃষ্টিতে মারা যায়। আবার নতুন করে রোপণ করি। এখন একটু লাভ হচ্ছে। কিন্তু ৪০ টাকার নিচে বিক্রি করলেই আমার লোকসান হবে। বাজারে দাম বেশি থাকলেও আমার হয় সামান্য লাভ।’

চুয়াডাঙ্গা সদরের বিভিন্ন সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ সবজির দাম ৫০ টাকার বেশি। প্রতি কেজি বেগুন ১২০ টাকা, আলু ৬০, কচুর লতি ৩০ টাকা , লাউ একটা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো ২০০ টাকা, লাল শাক এক আটি ১৫ টাকা, সবুজ শাক ১৫ টাকা, ডাটা শাক ৩০ টাকা, মরিচ ২৪০ টাকা, পেঁয়াজ১২০ টাকা ,রসুন ২২০ টাকা , পটল ৪০ টাকা, আমড়া ৮০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, আদা ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় সবজির দাম এ বছর দ্বিগুণ। কারণ বাজারে সবজির সরবরাহ অনেকটা কম। সরবরাহ বেশি থাকলে দাম কম হতো। আর আমরা সবজি আড়ৎ থেকে কিনে আনি। আড়ৎদাররা লাভ করে আমাদের কাছে বিক্রি করেন। আমরাও সামান্য লাভে বিক্রি করি। এ জন্য কৃষক যে দামে বিক্রি করেন সেখান থেকে দুই হাত ঘুরে দাম বেড়ে যায়।’

বাজার করতে আসা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক জামাল ইসলাম বলেন,‘বাজারে প্রচুর সবজির আমদানি। সিন্ডিকেট করে দাম বৃদ্ধি করেছে ব্যবসায়ীরা। আমি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় দিয়ে চলি। কিন্তু এই বর্ষার সময় ৬০ টাকা কেজি আলু,বেগুন ১০০ টাকা কেজি , একটা লাউ ৫০ টাকা এভাবে দাম হলে আমি কীভাবে চলব। সরকারের উচিত বাজার তদারকি করা।’

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন,‘বাজারে সবজির দাম একটু বেশি। কিন্তু কৃষককের উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক। দাম যে অবস্থায় আছে এর থেকে কমে গেলে তখন কৃষক লোকসানে পড়বে। সব দিক বিবেচনায় রাখা উচিত।’