এসিল্যান্ড পরিচয়ে মোবাইলে চাঁদাবাজি

মূল হোতাকে খুঁজতে মাঠে নেমেছেন প্রশাসন

যশোর মনিরামপুর কুয়াদা বাজারে এসিল্যান্ড পরিচয়ে বিভিন্ন দোকানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ভয় দেখিয়ে মোবাইলে লাখ লাখ টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী দোকানী ও ব্যবসায়ীরা মনিরামপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, প্রথমে গত ০৭ই জুলাই সন্ধ্যায় রামনগর ইউপি সদস্য রাশেদ হোসেনের নিকট ০১৮৭৪-২০৬৭৫৯ নম্বর থেকে এসিল্যান্ড, সদর পরিচয়ে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি রাশেদ হোসেন’র নিকট তার ওয়ার্ডে থাকা স’মিল, হোটেল ও তেলপাম্পের বিষয়ে তথ্য চান।

ইউপি সদস্য রাশেদ হোসেন তাকে কামালপুর ০৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের নম্বর প্রদান করেন। কিছুক্ষণ পর ওই নাম্বার থেকে নজরুল ইসলামের নিকট কল দিয়ে কুয়াদা বাজারের সকল স’মিল, হোটেল’র তথ্য জানতে চান। তখন তিনি কুয়াদা বাজারস্থ ৯নং ওয়ার্ড সিরাজসিঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামের নাম্বার দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন।

পরে ওই নাম্বার থেকে কামরুল ইসলামের নিকট ফোন করলে তিনি কুয়াদা বাজারের সকল মিষ্টির দোকান ও স’মিলে গিয়ে কথা বলিয়ে দেন। ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্ট পরিচলনা করে জরিমানা আদায় ও প্রতিষ্ঠান সিলগালা করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ভাই ভাই মিষ্টান্ন ভান্ডারে ৫০ হাজার, স’মিল ব্যবসায়ী শাহাজান কবিরের নিকট ৮০ হাজার, আরাফাত ইয়াসির প্রান্তর নিকট ৫০ হাজার, ঘোষ মিষ্টান্ন ভান্ডার’র বাবু ঘোষের নিকট ২০ হাজার টাকা দাবি করেন।

আরো পড়ুন=>> সোনার বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে

ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে কুয়াদা বাজারে মিষ্টি ব্যবসায়ী কৃষ্ণ কুমার সাহা ০১৮৭৪-২০৬৭৫৯ নাম্বারে নগদের মাধ্যমে দুটি কিস্তিতে ৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।

ঘটনার বিষয়ে রামনগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য রাশেদ হোসেন’র নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত ৭ তারিখে আমার কাছে একটি ফোন আসে। আমাকে তিনি এসিল্যান্ড পরিচয় দিয়ে বাজারে থাকা তেল পাম্প, স’মিল ও হোটেল’র তথ্য এবং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতির নাম্বার জানতে চান। আমি তাকে সভাপতির নাম্বার দিয়ে দিয়েছিলাম।

তারপর কি হয়েছে জানি না, তবে লোকমুখে শুনেছি এসিল্যান্ড অফিসার পরিচয়ে কুয়াদা বাজারে চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জামাই ইউপি সদস্য রাশেদ হোসেন আমাকে কল দিয়ে বলেন, যশোর সদরের এসিল্যান্ড আপনার সাথে কথা বলবে, আমি আপনার নাম্বার দিয়ে দিছি।

নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন আমি নামাজে থাকা অবস্থায় ওই নাম্বার থেকে আমাকে কল করেন এবং নিজেকে এসিল্যান্ড পরিচয় দিয়ে কুয়াদা বাজারের হোটেল ও স’মিলের তথ্য জানতে চান। আমি তাকে সিরাজসিঙ্গা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল ইসলামকে জানিয়ে তার নাম্বার দিয়ে দিছি। কামরুল ইসলাম কি করেছে আমি তা জানি না। তবে আমাকে চক্রান্ত করে ফাসানো হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

ঘটনার বিষয়ে যশোর সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসানের নিকট জানতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে তিনি কল রিসিভ করেননি। অপরদিকে মনিরামপুর সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুমের সাথে মুঠোফোনে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘটনার বিষয়ে কুয়াদা বাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক বাচ্চু হোসেন বলেন, ঘটনাটি সত্য। আমাদের বাজারে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে যেটা আদৌ কাঙ্খিত না। আমি পরে ঘটনাটি জানতে পেরে ব্যবসায়ীদের নিয়ে মনিরামপুর এসিল্যান্ডের নিকট গিয়েছি এবং একটি লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক প্রকৃত দোষীদের শাস্তি কামনা করছি।

প্রতারণার অভিযোগ উঠা সাবেক ইউপি সদস্য কামরুল ইসলাম’র সাক্ষাতকার নিতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করেন নি, এমনকি বারবার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।