কৃতি শিক্ষার্থীদের পুরস্কার প্রদানকালে সাহিদুজ্জামান টরিক

আল্লাহর ওপর বাবার বিশ্বাস আজ এই মাদ্রাসার উচু ভবন তৈরি করেছে

‘মৃত্যুর আগে আমার বাবা বলেছিলেন, তুমি এই মাদ্রাসার সঙ্গে কখনো দূরত্ব বাড়িও না। এই মাদ্রাসা যেন কিয়ামত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে, সেই ব্যবস্থা তুমি করে দিও। বাবা এই মাদ্রাসার জন্য কোনো সরকারি অনুদান নিতে নিষেধ করতেন, আমি তখন বলতাম তাহলে এই মাদ্রাসা চলবে কিভাবে? বাবা বলতেন মাদ্রাসা তুমি চালাবা, কারো সাহায্যের তোমার দরকার নেই সৃষ্টিকর্তা তোমাকে সাহায্য করবে।

আল্লাহর ওপর বাবার সেই বিশ্বাস আজ এই মাদ্রাসার উচু ভবন তৈরি করেছে। আমি যে একবারে অনেক টাকা খরচ করে এই মাদ্রাসার ভবন করেছি তা কিন্তু নয়, আমার কাছে এত টাকা ছিলো না, কিন্তু একটার ওপর একটা ইট গাঁথার মত করে এই মাদ্রাসা আল্লাহ করে দিয়েছেন। যেখানে আজ শত শত শিক্ষার্থীরা দ্বিনি শিক্ষা গ্রহণ করছে।

কথাগুলো বলেছেন এনআরবি ওয়ার্ল্ডের প্রেসিডেন্ট, সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ বিজনেস অব চেম্বারের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট, সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, হোটেল সাহিদ প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পাঁচ কমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসার পরিচালক চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক।

বৃহস্পতিবার (১১জুলাই) আলমডাঙ্গা উপজেলার পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসায় দোয়া, আলোচনা ও কৃর্তি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবেগঘন কণ্ঠে এসব কথা বলেন তিনি।

আরো পড়ুন=>> জীবননগরে মসজিদ কমিটির সভাপতি পদ নিয়ে মারামারি, আহত-২

আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক নিজের পিতাকে স্মরণ করে বলেন, ‘আমার বাবা বার বার বলতেন তুমি সারা জীবন দ্বিনি শিক্ষার জন্য কাজ করো। দ্বিনি শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও পরকালীন সাফল্য। কিন্তু কখনো কখনো দ্বিনি শিক্ষা দ্বিন—দুনিয়ার সমূহ কল্যাণেরও কারণ হয়ে যায়। দ্বিনি শিক্ষার সঙ্গে যারা জড়িত আমার বাবা তাঁদেরকে অনেক পছন্দ করতেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটাতেন, তাবলীগ করতেন।

বাবার ভালোবাসার জায়গা থেকেই আজকের অনুষ্ঠানে এ জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, তাবলীগ ও দ্বিনি শিক্ষার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অতিথি হিসিবে আমন্ত্রণ করেছি। বাবার অনুপ্রেরণা থেকে ইসলাম ও দ্বিনি শিক্ষার প্রচারে আমি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি।’

আলোচনা সভা, দোয়া ও সংবর্ধনার আয়োজনে জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক, হাফেজ, মাওলানা ও ওলামায়ে কারিমগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অতিথি থেকে বক্তব্য দেন, বুজরুকগড়গড়ি মাদ্রাসার মুহাদ্দীস মুফতি শোয়াইব আহমাদ কাসেমী, মুহাদ্দীস মুফতি আজিজুল্লাহ, খুলনা বিভাগীয় কাওমি পরিষদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি মুফতি রুহুল আমিন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন মুহা. মাহফুজুর রহমান। পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম হাফেজিয়া কওমিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মুস্তাফিজুর রহমান শামীমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু, দৈনিক সময়ের সমীকরণ—এর প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন, জেষ্ঠ্য সাংবাদিক রফিক রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. নুরুজ্জামান প্রমুখ।

আলোচনা সভা পুরষ্কার বিতরণ শেষে মাদ্রাসা প্রাঙ্গনে সকলে মধ্যহ্ন ভোজে অংশ নেয়। প্রসঙ্গত, এনআরবি ওয়ার্ল্ডের প্রেসিডেন্ট, সিঙ্গাপুরস্থ বাংলাদেশ বিজনেস অব চেম্বারের (বিডিচ্যাম) প্রেসিডেন্ট, সাহিদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ও হোটেল সাহিদ প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক, এক সময়ের সাংবাদিক ও বর্তমান বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী আরিফুজ্জামান আরিফ ও দৈনিক সময়ের সমীকরণের প্রকাশক সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফের পিতা মরহুম শামসুজ্জোহা বিশ্বাস একটি সুন্দর দ্বীনি—শিক্ষার ভাবনা নিয়ে মরহুম হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাস ২০০১ সালে মাত্র ১৩ জন ছাত্র ও একজন শিক্ষক নিয়ে একটি চালা—ঘরে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাদিমপুর ইউনিয়নের পাঁচকমলাপুর গ্রামে ‘পাঁচকমলাপুর দারুল উলুম কওমিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা’ নামে দ্বীনি শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।

২০১০ সালে হাজি শামসুজ্জোহা বিশ্বাসের মৃত্যুর পর এই মাদ্রাসাটির পরিচালকের দায়িত্ব নেন তাঁর পুত্র চুয়াডাঙ্গার কৃতী সন্তান ও দানবীর হিসেবে খ্যাত আলহাজ্ব সাহিদুজ্জামান টরিক। একজন সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে পিতার সুস্বপ্নকে আন্তরিকতা, ভালোবাসা, মেধা ও শ্রম দিয়ে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। মাদ্রাসাটি পরিচালনার জন্য সাহিদুজ্জামান টরিক চুয়াডাঙ্গায় তিন তারকা মানের হোটেল সাহিদ প্যালেস অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করেছেন।

সেখানে থেকে আয়কৃত সম্পূর্ণ অর্থ এ মাদ্রাসা কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়। ২০১১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে মাদ্রাসাটিতে ছাত্রদের জন্য লিল্লাহ বোর্ডিং এর ব্যবস্থা করা হয়। যেখানে তিন বেলা মাদ্রাসার সকল মাদ্রাসাটির ইসলামি জ্ঞানচর্চার পরিবেশকে সুন্দর ও উন্নত করতে দারুণ ইন্টিরিয়র ও মনোরম পরিবেশে একটি পাঠাগার স্থাপন করা হয়।

এ বছরও মাদ্রাসাটি কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ভালো ফলাফল করেছে। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কাওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ২০২৪ এর ৪৭ তম পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মাদ্রাসার দশজন শিক্ষার্থী মুমতাজ (জিপিএ ৫) ও আটজন মেধাস্থান অর্জন করায় তাদেরকে পুরস্কার প্রদান করা হয়।

তাদের মধ্যে মারহালা: ইবতিদাইয়্যাহ হতে সাতজন মেধাস্থান অর্জনকারী ছাত্র হলেন— মো. রোকনুজ্জামান মেধাস্থান ৩৮, মো. পারভেজ মেধাস্থান ৩৮, মো. আব্দুল্লাহ মেধাস্থান ৬৬, মো, তহিদুল ইসলাম মেধাস্থান ৭৩, মো. রাফাউল্লাহ মেধাস্থান ৭৬, মো. বায়েজিদ ও মো. শাহরুখ ইসলাম মেধাস্থান ৮৩, মারহালা মুতাওয়াসসিতাহ্ শ্রেণি থেকে ৪৫ তম স্থান অর্জনকারী শিক্ষার্থী ওয়াজ কুরুনী। এছাড়াও মারহালা মুতাওয়াসসিতাহ শ্রেণি থেকে চারজন শিক্ষার্থী মো. ওয়াজ কুরুনী, মো. নাফিজ ইকবাল, মো. তাহেরুল ও মো. তাসিব আহমদ রামিম মুমতাজ (জিপিএ ৫) অর্জন করেছে।