চুয়াডাঙ্গার উথলীর গ্রামের দু’শো বছরের পুরনো রূপির চারা বটগাছ

জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক প্রায় দুশো বছরের পুরনো রূপিরচারা বটবৃক্ষ টি আজও দাড়িয়ে আছে ডালপালা বিস্তৃত করে বিশাল এক যায়গা জুড়ে। শীতল ছায়া দানকারী এই বটবৃক্ষটির নাম এলাকার কারোর অজানা নয়। রূপির চারা বটবৃক্ষটির নাম করনের রয়েছে এক দারুন ইতিহাস।

এলাকার বয়োবৃদ্ধদের কাছ থেকে জানা যায়, রূপি ছিলো এক সম্ভান্ত্র পরিবারের মেয়ে। ব্যক্তিগত জীবনে রূপি ছিলো নিঃসন্তান। একটি সন্তানের জন্য রূপি হাকিম-কবিরাজসহ সকলের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। অনেক বছর ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরাঘুরি করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে রূপি জনৈক এক দরবেশ বাবার কাছে গেলে দরবেশ বাবা তাকে একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষ লাগিয়ে ধুমধামের সাথে বৃক্ষ দুইটির বিবাহ দেওয়ার কথা বলে।

সন্তানের আশায় রূপি একটি বটবৃক্ষ ও একটি শিমুল বৃক্ষের চারা পাশাপাশি লাগিয়ে বিবাহ দেওয়ার ব্যবস্থা করে। বটবৃক্ষের চারাটি বর ও শিমুল বৃক্ষের চারাটি বধু সাঝে সুসজ্জিত করা হয়।লোকমুখে জানা যায় সেই বিবাহ অনুষ্ঠানে ৪ দিন ধরে বিশাল খানাপিনার আয়োজন করা হয়েছিলো।

আরো পড়ুন=>> মেহেরপুরে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদ

স্থানীয় লোকজন গাছ দুটিকে পরিচর্যা করলেও কয়েক বছর পর শিমুল গাছটি মারা যায়। সাধু বাবার পরামর্শে রূপি বট ও শিমুল গাছের চারা রোপণ করার পর সন্তান লাভ করতে পেরেছিলেন কিনা সেটা নিশ্চিত ভাবে জানা যায় নি।তবে তার লাগানো গাছের চারাটি আজ ঐতিহাসিক রূপিরচারা বটগাছ।

রূপি বটের চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেছে বলেই এলাকাবাসী এই বৃক্ষটির নাম দেয় রূপির চারা বটগাছ। এলাকার লোকজনের মধ্যে প্রচলিত আছে রূপিরচারা বটগাছের ডাল কাটলে বা পাতা ছিড়লে তার অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় তাই এই গাছের একটি পাতাও সহজে ছিড়ে না কেউ।

বটবৃক্ষটি উথলী-হিজলগাড়ী ও মোল্লাবাড়ি-আন্দুলবাড়িয়া সড়কের চার রাস্তার সংযোগস্থলে অবস্থিত। অনেক ক্লান্ত পথিক এই গাছের শীতল ছায়ায় বিশ্রাম গ্রহণ করে। গাছে আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখির কল-কাকলি ধ্বনিতে মুখরিত হয় এই এলাকার পরিবেশ।

তকালীন সময়ে বটবৃক্ষটি হয়ে ওঠে অতিথি পাখিদের আবাসস্থল। রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিনদিন বট গাছের একপাশ ধসে চলে যাচ্ছে পুকুরের মধ্যে। বটবৃক্ষটি রক্ষণাবেক্ষণ ও মানুষের বিশ্রাম নেওয়ার সুবিধার্থে গাছের চারিদিকে টাইলস দিয়ে বাঁধানোর জন্য জনপ্রতিনিধিদের সুদৃষ্টি কামনা করেছে এলাকাবাসি।