আলো ঝলমলে রূপের শহর রূপপুর

পাবনার ঈশ্বরদীতে নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুউচ্চ কুলিং টাওয়ার দেখতে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। একই সঙ্গে দর্শনার্থীরা উপভোগ করছে পদ্মা নদীর ওপর নির্মিত শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু। রূপপুর প্রকল্প, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর মতো তিনটি কেপিআইভুক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা একই স্থানে দেখে দর্শনার্থীরা বিমোহিত হচ্ছে।

এছাড়া পদ্মা নদীর অপরূপ সৌন্দর্য ও পাকশীতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত রেলওয়ের বিভিন্ন স্থাপনা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করছে। দর্শনার্থী ও স্থানীয়রা পদ্মা নদীর তীরে পর্যটনকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নানাবিধ অসুবিধা দূর হবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রায় ১৮০ মিটার সুউচ্চ (প্রায় ৪০ তলা ভবনের সমান উঁচু) চারটি কুলিং টাওয়ার, লালন শাহ সেতু, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নিচে ও পাকশী রেলওয়ে স্টেশনের সৌন্দর্য দেখতে হাজারো মানুষের ভিড়। সবচেয়ে বেশি ভিড় লালন শাহ সেতুতে।

আরো পড়ুন=>> কোটা বাতিলের দাবিতে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি প্রদান

ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও মোটরসাইকেল নিয়ে লালন শাহ সেতু থেকে কুলিং টাওয়ারসহ নির্মাণাধীন রূপপুর প্রকল্প ও গ্রীণসিটি এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখে। লালন শাহ সেতুতে দাঁড়িয়ে কুলিং টাওয়ারসহ সেলফি তোলে অনেকে। রূপপুর প্রকল্প এলাকায় প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দূরে দাঁড়িয়ে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এ প্রকল্পের চলমান নির্মাণকাজ দেখে মানুষ বিস্মিত হয়।

এছাড়াও পদ্মা নদীর দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করে। ১১০ বছর পরেও এ ব্রিজের সৌন্দর্য এক চিলতেও নষ্ট হয়নি। তাই তো প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশেই সমান্তরালভাবে দাঁড়িয়ে আছে লালন শাহ সেতু। এলাকাটিকে মানুষ এখন জোড়া সেতু নামে ডাকছে।

এটি দেশের তৃতীয় দীর্ঘতম সড়ক সেতু। এছাড়াও অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় কার্যালয়। এখানে ব্রিটিশ আমলের রেল ইঞ্জিন, শত বছরের বড় বড় গাছগাছালি ও রেলের নানা নান্দনিক স্থাপনা সবাইকে বিমোহিত করছে।

লালন শাহ সেতুতে কথা হয় নওগাঁ থেকে আসা দর্শনার্থী মাইনুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, লালন শাহ সতুতে দাঁড়িয়ে পপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ দেখা ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের সৌন্দর্য উপভোগ করাটা একটা অন্যরকম ব্যাপার। বিদ্যুৎ প্রকল্পের সুউচ্চ কুলিং টাওয়ার সম্পর্কে তো বলার কিছু নেই। পাশাপাশি পদ্মা নদীর ঠান্ডা বাতাসে শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছে। এখানকার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই উপভোগ্য। আমার মতো শত শত দর্শনার্থী এখানে দাঁড়িয়ে সৌন্দর্য উপভোগ করছে। তবে সমস্যা খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম নেওয়া এবং টয়লেটের।

সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র স্থাপন করা হলে দর্শনার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব হবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্রিটিশ নানন্দিক স্থাপনার নিদর্শন রয়েছে পাকশী জুড়ে। পদ্মা নদী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ, লালন শাহ সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, রেলওয়ে বিভাগীয় সদর দপ্তর, নান্দনিক রেল স্টেশন, ব্রিটিশ আমলের শতবর্ষী শত শত গাছ- সব মিলিয়ে পাকশীকে সৌন্দর্যের তীর্থস্থান বলা যেতে পারে। এই এলাকা পর্যটন শিল্পের আওতায় আনা হলে এখানে দর্শনার্থীদের সমাগম আরো বাড়বে, পাশাপাশি সরকারের রাজস্ব অর্জিত হবে।