ইংরেজিতে শতাধিক সনেট লিখেছেন বিস্ময় বালক বোরহান

বাংলাদেশে সনেট মানেই মাইকেল মধু সুদন দত্ত। তার বাইরে কখনই কেউ কল্পনাতেও আনবে না সাহিত্যে এ ধারায় পদচারণা। তবে ইংরেজি সাহিত্যের এমন ব্যতিক্রমী ধারায় দেশে এই প্রথম বোরহান রচনা করেছেন সনেট। যা সারা জেলাজুড়ে ফেলেছে হৈচৈ।

বিস্ময় বালক বোরহান একটি-দুটি নয় শতাধিক সনেট লিখেছেন, তাও আবার ইংরেজিতে। একুশে বই মেলায় নিজের লেখা ইংরেজি সনেটের দুটি বই বের হয়েছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে এ কীর্তি রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

ইনসুরেন্স কর্মকর্তা বোরহানের বাবা ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, ছোটবেলা থেকেই মেধাবী এমএনএস বোরহান। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় সে। ঝিনাইদহ সরকারি কেসি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র। জীবণে কখনই কোনো ক্লাসে ২য় হয়নি সে। পিএসসি ও এসএসসিতে গোল্ডেন পাওয়া বোরহান গত ৩ বছর ধরে লিখছে সনেট। তাও আবার ইংরেজিতে।

আরো পড়ুন=>> দামুড়হুদায় হেরোইনসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

একশোর উপর সনেট লিখে তাকলাগিয়ে দিয়েছে সাহিত্য অনুরাগীদের। একুশের বই মেলায় বের হয়েছে ‘ট্রু ভ্যালেনটিনো টু ইয়ে এভার’ ও ‘দ্যা সনেটস’ নামের ২টি বই।

জানা যায়, চতুর্দশপদী বা সনেট হলো এক ধরনের কবিতা যার প্রথম উদ্ভব হয় মধ্যযুগে ইতালিতে। এর বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ১৪ লাইনের হয়। আবার প্রত্যেক লাইনে ১৪টি করে অক্ষর থাকে। সনেটের প্রবর্তক ইতালিয় কবি পেত্রার্ক। বাংলা ভাষায় প্রথম সনেট রচনা করেন মাইকেল মধূসুদন দত্ত।

তবে বোরহানের লেখা সনেটের বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো ২১ লাইনবিশিষ্ট। প্রতিটি লাইনে ২১টি করে অক্ষর রয়েছে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২১ পদী ইংরেজি ভাষায় সনেট লিখে রীতিমতো বিস্ময় সৃষ্টি করেছে সে। ২১ পদী ইংরেজি ভাষায় সনেট বোরহানই প্রথম লিখেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।

বোরহানের লেখা সনেট ও কবিতার মূল বিষয়বস্তু ভালোবাসা এবং তা প্রকাশের নানা রকম আবেগ-অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ রয়েছে এতে।

বোরহানের মা নাছরিন সারাম জানান, ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর তার জন্ম। ওর ভেতরে পড়ালেখার ঝোঁক ছোটবেলা থেকেই দেখতে পাই আমরা। রাত জেগে পড়াশুনাসহ নতুন নতুন কিছু করার ইচ্ছে সব সময় তাকে তাড়া করে বেড়ায়। আমরাও উৎসাহ দিতাম। কিন্তু সে যে এমন ইনোভেটিভ (বিস্ময়) কাজ করে ফেলবে তা সত্যিই অবাককর ও অপ্রত্যাশিত।

ইংরেজি সনেট লেখক এমএনএস বোরহান জানান, তার লেখা প্রতিটি সনেট ইংরেজিতে ২১ লাইনের। প্রতিটি লাইনে আবার ২১টি করে অক্ষর। এ ধরনের কবিতা (সনেট) অনায়াসে লিখতে পেরে আমি সত্যিই গর্বিত। গত আড়াই বছরে এ ধরনের ১শ উপর কবিতা লিখেছে সে।

ইংরেজি সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়তে পড়তে আমার এ লেখা। তবে মাইকেল মধুসুদনের সনেট আমি প্রচুর পরিমাণে পড়েছি । আমি আরো লিখতে চাই ভবিষ্যতে।

ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজের প্রিন্সিপাল অশোক কুমার মৌলিক জানান, বোরহান আমাদের গর্ব। ওর লেখা ইংরেজি সনেট আমাদের প্রত্যেককে উৎসাহিত করছে। সত্যিই এমন দুরহ বিষয়ে সে যা করেছে তা সাহিত্য জগতে বিরাট ঘটনা।

তিনি আরও বলেন, সে যা করেছে তা সত্যিই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমি তার ধারাবাহিত সাফল্য কামনা করছি।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক জনি আহম্মেদ জানান, সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা এটি।

তার লেখনীতে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় নেই। সম্পূর্ণ ভাবাবেগ প্রকাশ হয়েছে। প্রতিটি লাইনে পুঙ্খানুপঙ্খভাবে প্রেম-ভালোবাসা, প্রকৃতিকে প্রকাশ করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *